MEET with sparkol...Become A 3d animation Expert..

শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০১৮

ধর্মপ্রাণ লাখো মুসলমানদের ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনিতে মুখরিত টঙ্গীর তুরাগ নদের পূর্ব পাড়ের বিশ্ব ইজতেমা ময়দান। পবিত্র হজের পর মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় জমায়েত বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) থেকে শুরু হয়েছে। প্রথম দিনেই জুমার নামাজকে ঘিরে সকাল থেকেই তুরাগ তীরে অগণিত মুসল্লিদের ঢল নামে। জুমার নামাজকে ঘিরে আশপাশের এলাকায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের।
ইজতেমা ময়দানে জুমার নামাজের ইমামতি করেন কাকারাইল মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ জুবায়ের। জুমার নামাজ আদায় করার জন্য রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকা থেকে ছুটে আসেন নানা বয়সী মানুষ। দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে এসেছেন অনেকেই। তিলধারনের ঠাঁই ছিল না।
শুক্রবার ফজরের নামাজের পর বিশ্ব ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হয়। বাদ ফজর বয়ান করেন বাংলাদেশের মাওলানা ওমর ফারুক। বাদ জু’মা ভারতের মাওলানা শেখ আহমেদ মাসুদ। বাদ আছর ভারতের মাওলানা ইউনুস পালনপূরী ও বাদ মাগরিব ভারতের হযরত মাওলানা আকবর শরীফ বয়ান করেন বলে জানান ইজতেমার মুরুব্বী ইঞ্জিনিয়ার মো. গিয়াস উদ্দিন।
বয়ানে আলেমগণ বলেন, পরকালের চিরস্থায়ী সুখ শান্তির জন্য আমাদের প্রত্যককে দুনিয়াতে জীবিত থাকা অবস্থায় দ্বীনের দাওয়াতের কাজে কঠিন মেহনত করতে হবে। ঈমান আমলের মেহনত ছাড়া কেউ হাশরের ময়দানে কামিয়াব হতে পারবে না।
শুক্রবার বাদ ফজর থেকেই ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের জিকির আসকার ইবাদত বন্দেগীতে টঙ্গী এক পবিত্র পুণ্যভূমিতে পরিণত হয়। জুমার নামাজকে ঘিরে ভোর থেকেই তুরাগ তীরে জন স্রোতের ঢল নামে। ইজতেমার প্রথম দিনেই ইজতেমা মাঠে অনুষ্ঠিত হয় দেশের স্মরণকালের বৃহত্তম জুমার নামাজ।
জুমার নামাজ আদায় করতে রাজধানীর আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি ছুটে আসেন। ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের পাশ ঘেঁষে ইজতেমা মাঠের উত্তর দিকের রাস্তায়ও জামাত দাঁড়ায়। মূল প্যান্ডেলে জায়গা না পেয়ে অগণিত মুসল্লিদের রাস্তায় কিংবা মহাসড়ক ও খোলা জায়গার ওপর খবরের কাগজ, জায়নামাজ, পলিথিন ও হোগলা বিছিয়ে নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে।
তাবলিগ জামাতের উদ্যোগে প্রতি বছর টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরের ১৬০ একর এলাকা জুড়ে বিশাল চটের ছাউনীর নিচে এ ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে তাবলিগ জামাতের শীর্ষ আলেমরা দীনের বয়ান করেন। বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশর তাবলিগ জামাতের অনুসারী ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এ ইজতেমায় অংশ নেন। তারা বয়ান শুনেন এবং ইসলামের দাওয়াতি কাজ বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেওয়ার জন্য জামাতবদ্ধ হয়ে বিশ্ব ইজতেমা থেকেই দাওয়াতি কাজে বের হন।
লাখো মুসল্লির সঙ্গে দেশের বৃহত্তম জুমার নামাজ আদায় করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, আইজি এ কে এম শহিদুল হক, অতিরিক্ত আইজিপি ড. জাভেদ পাটোয়ারী, জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ প্রমুখ।
ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে ৮৩টি দেশের ৩৯৭৮ জন বিদেশি মুসল্লি অংশ নিয়েছেন বলে জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম সূত্র জানিয়েছে। ইজতেমার কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আম ও খাস বয়ান, তালিম, তাশকিল, ৬ উছুলের হাকিকত, দরসে কোরআন, দরসে হাদিস, চিল্লায় নাম লেখানো, নতুন জামাত তৈরি।
ইজতেমা মাঠের সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশ ও র‌্যাব কন্ট্রোল রুম ও ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করেছে। সিসি ক্যামেরা মাধ্যমে সার্বিক নিরাপত্তা কন্ট্রেল রুম থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। খিত্তায় খিত্তায় সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছেন। পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা ৭টি করে স্তরে বিভক্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৪টি জেলার মুসল্লিরা ২৮টি খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন। এর মধ্যে ১ থেকে ১০ নম্বর এবং ১৮ ও ১৯ নম্বর খিত্তায় ঢাকা, ১১ ও ১২ নম্বর খিত্তায় জামালপুর, ১৩ নম্বর খিত্তায় ফরিদপুর, ১৪ নম্বর খিত্তায় কুড়িগ্রাম, ১৫ নম্বর খিত্তায় ঝিনাইদহ, ১৬ নম্বর খিত্তায় ফেনী, ১৭ নম্বর খিত্তায় সুনামগঞ্জ, ২০ নম্বর খিত্তায় চুয়াডাঙ্গা, ২১ ও ২২ নম্বর খিত্তায় কুমিল্লা, ২৩ ও ২৪ নম্বর খিত্তায় রাজশাহী, ২৫ ও ২৭ নম্বর খিত্তায় খুলনা, ২৬ নম্বর খিত্তায় ঠাকুরগাঁও এবং ২৮ নম্বর খিত্তায় পিরোজপুর জেলার মানুষ অবস্থান নেন।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান জানান, ইজতেমা উপলক্ষে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে কাউন্সিলর, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সমন্বয়ে ১২টি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটি ইজতেমা চলাকালে সার্বক্ষণিকভাবে বিভিন্ন সেবাদান কার্যক্রম বাস্তবায়নে নিয়োজিত থাকবে। বর্জ্য নিষ্কাশন, ব্লিচিং পাউডার ও মশার ওষুধ সরবরাহ করে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করছে সিটি কর্পোরেশন। তারা ইজতেমা স্থলের পানির সংযোগস্থলে পর্যাপ্ত পানি সংযোগ ও ব্যবস্থাপনা জোরদার করেছেন।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর জানান, জেলা প্রশাসন বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক কর্মকা- সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বিভাগের কাজের সমন্বয় করে থেকে। ঢাকা বিভাগীয় প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দিকনিদের্শনায় বিভিন্ন কার্যাদি তদারকি করে।
বৃহস্পতিবার বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কাজ করছে। প্রায় ৫০টি স্বেচ্ছাসেবী, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছে। মন্নুনগর এলাকায় হামদর্দ ফ্রি-মেডিকেল ক্যাম্প ছাড়াও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, গাজীপুর সিভিল সার্জন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ আয়ুর্বেদিক ইউনানী হারবাল মেডিকেল সোসাইটি, রবি, জাতীয় ইমাম সমিতি-টঙ্গী শাখা, যমুনা ব্যাংক ফাউন্ডেশন, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জনকল্যাণ ফ্রি-মেডিকল ক্যাম্প, ইবনে সিনা, আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প বৃহস্পতিবার থেকে মুসল্লিদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, চিকিৎসা নিতে আসা মুসল্লিদের অধিকাংশই জ্বর, ঠান্ডা, পেটের পীড়াজনিত রোগে আক্রান্ত।
ইজতেমার মুরব্বিদের দেয়া তথ্যমতে, ১৯৪৬ সালে প্রথম কাকরাইল মসজিদে ইজতেমার আয়োজন শুরু করা হয়। তারপর ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের হাজী ক্যাম্পে ও ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধরগঞ্জে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ১৯৬৬ সালে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বর্তমানস্থলে স্থানান্তর করা হয়েছে। পরে সরকারিভাবে তুরাগ তীরের ১৬০ একর জমি স্থায়ীভাবে ইজতেমার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়।

0 মন্তব্য(গুলি):

WANNA BE a PROFESSIONAL ANIMATION SPECIALIST....then check it out

বিপদ বেশি , সহায় কম কথায় বলে , ‘ বিপদের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু। ’ আমাদের জীবনে বিপদ আছে পদে পদে ; কিন্তু বিপদের বন্ধু কি আছ...